সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ইতিহাস স্বাক্ষী সু-শিক্ষা প্রত্যেক জাতির মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। আমরা এজন্যই বলি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড; কিন্তু রংপুরের সদর উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘটছে তার উল্টো। ১১৫ বছরের প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠে দুর্নীতির দুষ্টচক্র বেশ চেপে বসেছে।
সম্প্রতি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যের ব্যানারে (১৭ ডিসেম্বর) ২৩ইং সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানান। এবং (২১ ডিসেম্বর) ২৩ইং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর এবং (২৪ ডিসেম্বর) রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বরাবর, আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার সীমাহীন দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে, গণস্বাক্ষরসহ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির ভোটে নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য শাহাদাৎ হোসেন লিখন। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, রংপুর সদর উপজেলাধীন আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় (ইআইআইএন-১২৭৩৬৫, স্কুল কোড-৫২৫৬) ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পর অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণ করলে বিধি মোতাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়।
যাতে অত্র প্রতিষ্ঠানেরই সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহীন বাদশা সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। নিয়োগ প্রাপ্তির পর তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভুক্তির জন্য যথাযথ ভাবে অনলাইনে আবেদন করা হলে তার বিএড সনদটি অননুমোদিত চিহ্নিত করে ফাইলটি রিজেক্ট করা হয়। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণ করলে নব নিয়োগকৃত সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পূর্বক আগ্রহী প্রার্থীদের নিকট হতে আবেদন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভুক্তির আবেদনটি রিজেক্ট হলে, তিনি হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার নিমিত্তে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদানে গড়িমসি শুরু করেন।
এ বিষয়ে গত (২২ নভেম্বর)-২৩ইং তারিখের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নিয়মিত সভায় সহকারী প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) বোর্ড কর্তৃক প্রেরিত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থাগিতাদেশের চিঠি উপস্থাপন করেন। এবং বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মোক্তার আহমেদ (মনু) সেই চিঠি একাধিকবার পড়ে শোনান। চিঠির বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ম্যানেজিং কমিটি।
বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জনাব শামসুল আলম বাবুর নির্দেশক্রমে দুইজন অভিভাবক সদস্য দিনাজপুর বোর্ডে গিয়ে, বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এর সঙ্গে সাক্ষাত করে জানা যায় যে, কথিত চিঠি বোর্ড থেকে প্রেরণ করা হয়নি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশা নিজেই এই চিঠি তৈরী করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাধা সৃষ্টি করছেন।
এহেন অবস্থায় ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি শামসুল আলম বাবুকে; বিদ্যালয় পরিদর্শক উক্ত শাহীন বাদশা বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, তার(উক্ত শিক্ষকের) দায়িত্ব ও ক্ষমতা বহিভূর্ত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহন করার বিষয়ে টালবাহানা শুরু করেন। এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও গুরতর অসদাচরণমুলক কার্যকলাপে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
যা শৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রবিধানের আওতায় শাস্তি যোগ্য অপরাধের শামিল। উল্লেখ্য বর্তমানে উক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তার লোকজনের নিকট বলাবলি করছেন যে, “আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ হতে সরানো এতো সহজ নয়। কারণ, সভাপতিকে আমি যা বলবো তিনি তাই করবেন। এমতবস্হায় প্রতিষ্ঠানটির বৃহত্তর সার্থে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি,স্বেচ্ছাচারি ও অসদাচরণমুলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আশু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
অপরদিকে অত্র বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষে, শিক্ষক প্রতিনিধি; শাজাহান খান, নুর মোহাম্মদ ও শাহীদা বেগম উপ-পরিচালক-মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চল এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সদর রংপুর বরাবর, লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
শিক্ষক প্রতিনিধিদের লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে অদ্যাবধি সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসার এক পর্যায়ে গত (২২ নভেম্বর) ২৩ইং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নিয়মিত সভায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিন বাদশা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত (১৪ নভেম্বর) ২৩ইং তারিখের একটি চিঠি উপস্থাপন করেন।
সেখানে অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখার কথা বলে হয়েছে। ফলে মিটিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বর্তমানে আমরা জানতে পারি উল্লেখিত চিঠিটি বোর্ড কর্তৃক প্রেরিত হয়নি; সেই সাথে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ কতিপয় সদস্য দিনাজপুর বোর্ডে গিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দেন ফলে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে আমরা শিক্ষক প্রতিনিধিসহ সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অত্র বিদ্যালয়ের শুভানুধ্যায়ীরা ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ আমাদের শিক্ষক ঠিক আছে। কিন্তু তিনি বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হবার মানসে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে পুশিং করছে। ক”দিন আগে তিনি আমাদেরকে ডেকে হোটেলে খাইয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থীর নিকট সার্বিক সহযোগিতাও চেয়েছেন। প্রয়োজনে স্যারের পক্ষে মানববন্ধন করার পরামর্শও দেন তিনি। মানববন্ধনের খরচাদির বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশাহ বলেন, এই এলাকায় আমার অনেক শিক্ষার্থী আছে। তারাই আমাকে বলেছে স্যার আপনার প্রয়োজন হলে আমাদের ডাকবেন, আমরা আছি আপনার সাথে।
উল্লেখিত অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর সঃমঃ আব্দুস সামাদ আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার অনিয়মের বিষয় একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমিটির ৭জন পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছে তা এখনো কার্যকর করা হয়নি।
বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া চিঠি উপস্থাপন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে বাধা সৃষ্টি করেছে। চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে শাহীন বাদশাকে শোকজ চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনিয়ম দূর্ণীতি প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহীন বাদশার নিকট অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে, তিনি সাংবাদিকদের বলেন ১৪ নভেম্বর বোর্ডের কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত; প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিতের চিঠি আছে প্রয়োজন হলে আমি সাংবাদিকদের দেখাবো।
দাম্ভিকতার সাথে তিনি আরও বলেন, চিঠির কথা অস্বীকার করলে আমি দিনাজপুর বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আবু হেনা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি চেয়ারম্যান স্যারকে জানিয়েছি বিষয়টি। এছাড়াও তিনি একাধিক বোর্ড কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয় সাংবাদিকদের সাথে শেয়ার করেন। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরবর্তীতে পর্বে থাকছে আরও বিস্তারিত।